নামি-দামি ব্রান্ডের বৈদ্যুতিক ক্যাবলস ক্রমে বেড়েই চলেছে। বৈদ্যুতিক ক্যাবলস মার্কেটে ভালো ব্রান্ডের ক্যাবল কিনতে গেলে শুনা বড়বড় দোকানে এক নম্বরটা ও দুই নম্বরটা উভয়ই আছে বলে জানতে পারে।এতে একদিকে যেমন মানহীন নকল ক্যালস ব্যবহার করে ক্রেতারা প্রকরিত হচ্ছে অন্যদিকে জনজীবন হয়ে পড়ছে মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ। তথ্যমতে, প্রতিবছর শুধু নকল ক্যাবলের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার জান মালের ক্ষতি হয়ে চলেছে। অসাধু বিভিন্ন নকলবাজ কোম্পানি নামিদামি কোম্পানির লোগো হুবহু মোড়কে ব্যবহার করে তা কমদামে দেদারছে বাজারজাত করছে। যেকারণে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে অগ্নিকান্ডের ঘটনা।
একাধিকবার র্যাবের অভিযান থেকে দেখা যায়, ক্যাবলস নকলকারী সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট রয়েছে ঢাকার নবাবপুরে। নবাবপুর তাজ মার্কেটের স্টার গোল্ড ফ্যান কোম্পানি, খান মার্কেটের স্বর্ণা ইলেকট্রিক, রাব্বি এন্টারপ্রাইজ, জাকির মার্কেটের টিআরবি ক্যাবলস কোম্পানি, টাওয়ার মার্কেটের সিফাত ট্রেডার্স, খান মার্কেটের এসএইচপি ক্যাবলস কোম্পানি, ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ, জাকির মার্কেটের তানিয়া ক্যাবলস কোম্পানি, খান মার্কেটের তারা ক্যাবলস কোম্পানি, পলক এন্টারপ্রাইজ, বিএনবি ক্যাবলস ও নিউ ইআরবি ক্যাবলস কোম্পানি, বিসমিল্লাহ ক্যাবলস কোম্পানি, খান অ্যান্ড সামির মার্কেটের টুটুল কারখানা, পলো ক্যাবলস কোম্পানি, সানজিদা ক্যাবলস কোম্পানি, ইভানা ক্যাবলস ইন্ডাস্ট্রি, এমআরবি ক্যাবলস কোম্পানি, জিহান ক্যাবলস কোম্পানি, নাভা ক্যাবলস কোম্পানি, রহিম মেটালস সহ আরো প্রায় অর্ধ শতাধিক কোম্পানি। কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা যেসব বৈদ্যুতিক পণ্য বিক্রি করে সবই নকল। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান নকল ও আসল দুটোই বিক্রি করে। নামিদামি ব্রান্ডের নামে নকলকারী কোম্পানি নিম্নমানের কপার ও প্লাস্টিক ব্যবহার করে নকল ক্যাবল তৈরি করছে, যা সরকার ও জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করা। ক্যাবলস নকল করা ঢাকার অন্যান্য এলাকার অসাধু কোম্পানিগুলো বংশাল, সুত্রাপুর, সিদ্দিকবাজার, শ্যামপুর, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, কাঁচপুর, জিঞ্জিরা, সাভার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, উত্তরা,কালিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা পর্যন্ত কারখানা বিস্তৃত করেছে।
এছাড়া প্রকাশ্যে ধোলাইখাল এলাকায় জাহাজের ক্যাবলস বিক্রয়ের নামে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ নিম্নমানের ক্যাবলস কেজি দরে বিক্রি করছে একটি অসাধু চক্র। এসব ক্যাবলস এলুমনিয়াম, লোহার তার কপারের কালার করে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এদের না দিতে হয় ভ্যাট, না দিতে হয় ট্যাক্স। অজ্ঞাত স্থান থেকে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে তৈরি করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেদারছে বিক্রি হয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে।
দেশে বর্তমানে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ক্যাবল, আটটি প্রতিষ্ঠানের সুইচ-সকেট ও ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের ফ্যান তৈরির লাইসেন্স আছে। এছাড়া, অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির লাইসেন্স আছে মাত্র ২২টি প্রতিষ্ঠানের। লাইসেন্স ছাড়া প্রায় শতাধিক কারখানায় তৈরি নকল পণ্য দিয়ে বাজার সয়লাব। এরসঙ্গে কিছু ব্যবসায়ী যারা, বৈধ-অবৈধ্ভাবে বিদেশ থেকে অতি নিম্নমানের পণ্য আমদানি করে দেশে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করছে। অনেকে প্রতিষ্ঠিত বৈদ্যুতিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তৈরি করছেন নকল কারখানা।
দেশের বাইরে থেকেও আসছে নিম্নমানের পণ্যের একটা বড় অংশ। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক পণ্য নকল করা হচ্ছে। খোদ রাজধানীতেই রয়েছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর নবাবপুরের কাপ্তান বাজার দেশের সবচেয়ে বড় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিকিকিনির এই এলাকার প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যায় স্বনামধন্য কেবল কোম্পানির নকল বৈদ্যুতিক তার। এমনকী কোনো কোনো দোকানে কোম্পানির স্টিকার দেওয়া থাকলেও সে স্টিকারও নকল করে সাঁটানো হয় তারের কয়েলে। এরা কেউকেউ চীন থেকে নিম্নমানের ক্যাবল আমদানি করে তার উপর সেরা ব্রান্ডের লোগো বসিয়ে বাজারজাত করছে, আবার কেউকেউ সরাসরি নিম্নমানের রম্যাটারিয়ালস দিয়ে ক্যাবলস নকল করছে। কিছুদিন অভিযান হলেও আবার নতুন করে নতুন নামে ক্যাবলস নকল শুরু হয়।
এক তথ্যে প্রকাশ, ২০২২ সালের প্রথম চার মাসেই দেশে অগ্নিকাণ্ডে ৬৫৩ জনের মৃত্যু এবং আহত হন ৬ হাজার ২৭ জন, ২০২১ সালে মারা গেছেন ২১৯ জন এবং আহত হন ৫৭০ জন, ২০২০ সালে মৃত্যু ১৫৪ এবং আহত হন ৩৮৬ জন, ২০১৯ সালে মৃত্যু ১৮৫ এবং আহত হন ৫৮৬ জন, ২০১৮ সালে মৃত্যু ১৩০, আহত ৬৭৭ জন এবং ২০১৭ সালে ৪৫ জনের মৃত্যু ও আহত হন ২৮৪ জন। এই অঙ্ক ক্রমে ভয়ানকভাবে বেড়ে চলেছে।
সারাদেশে শতাধিক ক্যাবলস নকলকারী কোম্পানি দাপটের সাথে প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। দেশে সংস্কারের এই সেক্টরেও সংস্কার করতে হবে। না হলে জনজীবনে ঝুঁকি আরো বাড়বে। বাড়তে থাকবে আরো অগ্নিকান্ড, সিস্টেম লস, সরকারের রাজস্ব লস।