নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী পাঁচ-ছয়টা দিন খুবই ক্রুসিয়াল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই হবে, একদিনও দেরি হবে না।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন ইলেকশন (নির্বাচন) দেরি হবে না। ইলেকশন প্রফেসর ইউনূস যে সময় বলেছেন, তার থেকে একটা দিনও দেরি হবে না।
প্রেস সচিব বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) প্রথমে বলেছিলেন এপ্রিলের প্রথমে। তারপর আমরা লন্ডনে বলেছি যদি অনেকগুলো সংস্কার হয়… কাজগুলো এগিয়ে যায় সেক্ষেত্রে এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে। আমরা সেই জায়গায় এখনো আছি। এটা একটা দিনও দেরি হবে না।
তিনি বলেন, যাই হোক না কেন, যেভাবেই জুলাই সনদ হোক না কেন এটার প্রভাব গিয়ে ইলেকশনে পড়বে না। ইলেকশন তার সময় মতো হয়ে যাবে। এটুকু আমরা বলতে পারি। এ বিষয়ে প্রফেসর ইউনূস খুবই দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান এখানে এবং পুরো কেবিনেটের এখানে দৃঢ় অবস্থান।
প্রেস সচিব আরও বলেন, আমাদের কেবিনেটে যারা আছেন, তারা আগে অনেক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তারা তাদের পুরোনো কাজে ফিরে যেতে চাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এক বছর হয়ে গেলো। আমরা কতটুকু সফল, কতটুকু ব্যর্থ আপনারা জাজ করবেন। কিন্তু আমার মনে হয়, আমরা যে ভয়ানক রকমের একটা ভূমিকম্পে.. মানে ভূমিকম্পে যেমন একটা দেশ ছারখার হয়ে যায়, সেরকম একটা দেশকে আমরা পেয়েছি। সেই জায়গায় এই সরকার চেষ্টা করেছে, দেশটাকে আবার গ্রোথের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। সেই জায়গায় আমি মনে করে এই অন্তর্বর্তী সরকার খুবই সফল।
শফিকুল আলম বলেন, সব মন্ত্রণালয়ে কাজ হয়েছে। আমি বলবো খুবই সিরিয়াস কাজ হয়েছে। বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমি মনে করি এগুলো খুবই যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ কাজগুলো সামনে আরও সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে একটা আইন ছিল, স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর থেকে বাজে ল (আইন) আসেনি। এটা ছিল বাংলাদেশের মহাচুরির বন্দোবস্তের একটা ল। একটা ল-কে সামনে রেখে এত চুরি.. আমরা রিপোর্ট করেছি লাখ কোটি টাকা চুরি হয়েছে এই একটিমাত্র ব্লক ব্যবহার করে। আমি আর আমার দুলাভাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবো, কোথায় কে কোনটা কাজ পাবে। কোনো ট্রেন্ডার প্রসেস নেই, আইনের প্রতি মিনিমাম কোনো নজর নেই। ওই আইনটা বাতিল করা হয়েছে আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার ১০ দিনের মাথায়। আমরা প্রতিদিন নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
শফিকুল আলম আরও বলেন, পুলিশ আমাদের একটা ডকুমেন্ট দিয়েছে ২১ পাতার, কী কী কাজ করেছে। আপনি গত এক বছরে পুলিশকে দেখেছেন মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে। আগে কলোনিয়ান একটা ক্রাউড কন্ট্রোলের ল ছিল, সে অনুযায়ী করতো। এখন আমরা যেটা করেছি আন্তর্জাতিকভাবে যেটা গ্রহণযোগ্য, ইউএন (জাতিসংঘ) যেটা বলে সেই কাজটা করছি।
তিনি বলেন, পুলিশে কাজ হচ্ছে। জুডিসিয়ারিতে যুগান্তকারী কিছু কাজ হয়েছে। জাজ নিয়োগের ক্ষেত্রে। আমি বলবো আপনি ফাইন্যান্স বলেন, এনবিআর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলেন- এমন কোথাও নাই যেখানে এই সরকার গত এক বছরে কাজ করেনি।
প্রেস সচিব বলেন, আমাদের বড় একটা সাফল্য স্থিতিশীলতা আনা। ভয়ঙ্কার রকমের একটা দুর্যোগের থেকে একটা দেশকে স্থিতিশীলতায় আনা খুবই কষ্টসাধ্য একটা কাজ। এই সরকার সেটা করতে পেরেছে। আপনারা অনেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বলেন। আমরা পুলিশকে বলেছি- আপনার যা পরিসংখ্যান আছে সবাইকে দেন। এটা যদি দেখায় ডাকাতি বাড়ছে, দেখুক। আমরা তো গোপন করছি না, আমাদের গোপন করার কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখছি, স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। হ্যাঁ, একটা-দুইটা হঠাৎ জঘন্য খুন দেখে অনেকে আঁতকে উঠছেন, বলছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমি আপনাদের বলবো পরিসংখ্যান দেখেন। আমি বলবো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আসছে এবং সামনে আরও উন্নতি হবে। পুলিশের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে এবং এটা আরও বাড়বে।
প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রফেসর ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এই দেশটাকে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে এসেছে। মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা কত বড় কষ্টসাধ্য বিষয় অনেকে এটা বুঝতে পারেন না। মূল্যস্ফীতি আটকে থাকলে তাকে নিচে নামিয়ে আনা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়। এই সরকার সেটা বাস্তবায়ন করতে সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, টাকা-ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে। রিজার্ভ বাড়ছে। রিজার্ভ বাড়ার জন্য অবশ্যই আমরা আমাদের প্রবাসী ভাইদের ক্রেডিট দেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, সেটা এটাকে (রিজার্ভ বাড়া) সাহায্য করেছে। এনবিআরে আমরা হস্তক্ষেপ করে কিছু সংস্কার এনেছি। এনবিআরের সংস্কারের সুফল সামনে সবাই পাবেন। বিডাতে আমরা সংস্কার এনেছি, এটা সুফল আসতে শুরু করেছে। আমরা মনে করি আগামী সরকারের আমলে বিদেশ থেকে খুব ভালো বিনিয়োগ আসবে।