• শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
লতিফ সিদ্দিকী ও সাংবাদিক পান্নার জামিন নামঞ্জুর রাজবাড়ী জেলা ডিবি পুলিশের সফল অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী আজিম গ্রেফতার শ্রীপুরে নিজমাওনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত রামুতে বিজিবির অভিযানে ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার, নারীসহ দুজন আটক বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত সুন্দরবনে অভয়ারণ্য থেকে মাছ ধরার সরঞ্জামসহ ৮ জেলে আটক ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রিজাইডিং-পোলিং কর্মকর্তার প্যানেল গঠনের নির্দেশ ইসির সাংবাদিক নির্যাতন মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি কারাগারে চরফ্যাশন আবুগঞ্জ বাজার পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু: স্বজনদের আহাজারি বগুড়ায় বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন: দিনভর বর্ণাঢ্য কর্মসূচি

অমুসলিমদের সঙ্গে আচরণে ইসলামের নির্দেশনা

নিউজ ডেস্ক
আপডেট : সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

সমাজবদ্ধভাবে জীবনযাপন করতে গিয়ে নানা শ্রেণির নানা পেশার নানা মত ও পথের মানুষের সঙ্গে চলতে হয়, মুখোমুখি হতে হয় অমুসলিমদেরও। লেনদেন ওঠাবসা, চলাফেরা, সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদি নানাক্ষেত্রে একজন মুসলিম ও অমুসলিমের সাক্ষাৎ হতে পারে।

কোনো মুসলিমপ্রধান দেশে অমুসলিমদের বসবাস কিংবা কোনো অমুসলিমপ্রধান দেশে মুসলমানদের বসবাস বিচিত্র কিছু নয়। অমুসলিম ব্যক্তি হতে পারে কোনো মুসলমানের প্রতিবেশী।

কোনো অমুসলিম যদি পুরোনো ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, তাহলে তো আরও অনেক অমুসলিমের সঙ্গে তার আত্মীয়তার সম্পর্কও থাকবে। বর্তমানে পৃথিবীতে যেভাবে দলে দলে অমুসলিমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছেন, তাতে এ বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক।  
যদি কারও কোনো প্রতিবেশী কিংবা কোনো আত্মীয় অমুসলিম হয়, ইসলামের নির্দেশনা হলো- তার সঙ্গেও প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের হক রক্ষা করে চলতে হবে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ দু’টি সম্পর্ক রক্ষা করার ওপর যথেষ্ট জোর দেওয়া হয়েছে।  

সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, একজন প্রতিবেশীর ওপর আরেকজন প্রতিবেশীর কী হক রয়েছে উত্তরে তিনি বললেন, ‘যদি সে তোমার কাছে ঋণ চায় তাহলে ঋণ দেবে, যদি তোমার সহযোগিতা চায় তাহলে তাকে সহযোগিতা করবে, যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তার খোঁজখবর নেবে, তার কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তাকে তা দেবে, সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়লে তার খোঁজখবর নেবে, যখন সে ভালো কিছু লাভ করবে তখন তাকে শুভেচ্ছা জানাবে, যদি সে বিপদে পড়ে তাহলে সান্ত্বনা দেবে, মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় শরিক হবে, তার অনুমতি ছাড়া তোমার ঘর এত উঁচু করবে না যে তার ঘরে বাতাস ঢুকতে পারে না-

কোনো ভালো খাবার রান্না করলে তাকে এর ঘ্রাণ ছড়িয়ে কষ্ট দেবে না বরং তার ঘরেও সে খাবার থেকে কিছু পৌঁছে দাও, যখন কোনো ফল কিনে তোমার বাড়িতে নেবে তখন হাদিয়াস্বরূপ তাকে সেখান থেকে কিছু দেবে, অন্যথায় সে ফল তুমি গোপনে তোমার বাড়িতে নেবে। এমন যেন না হয়, তোমার ছেলে এ ফল নিয়ে বাইরে বের হলো আর তার ছেলে তা দেখে অস্থির হয়ে পড়ল। ’ -ফাতহুল বারি খ. ১০, পৃ. ৫১৯

আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্ট বলেছেন, হজরত জিবরাইল (আ.) প্রতিবেশীর বিষয়ে আমাকে এমনভাবে উপদেশ দিচ্ছিলেন যে, আমি ভাবছিলাম- তিনি হয়তো তাদেরকে ওয়ারিশই বানিয়ে দেবেন। -সহিহ বোখারি ৬০১৫

আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার বিষয়ে নির্দেশনা তো আরও স্পষ্ট। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। -সহিহ বোখারি ৬১৩৮

প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলার এই যে নির্দেশনা, তাতে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। এমনটি  বলা হয়নি- তোমার প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়  যদি মুসলমান হয়, ধার্মিক হয়, ভালো মানুষ হয়, তাহলে তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে  চলবে। বরং প্রতিবেশী ও আত্মীয় যেমনই হোক, ধার্মিক হোক কিংবা না হোক, এমনকি মুসলিম হোক কিংবা না হোক, তার অধিকার অকাট্য ও অনস্বীকার্য। একজন মুসলমানকে এ অধিকার রক্ষা করেই জীবনযাপন করতে হবে।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের কিছু নির্দেশনা এমনও রয়েছে, যেখানে সুস্পষ্ট ভাষায় অমুসলিম আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক  রক্ষা করতে বলা হয়েছে। যেমন সূরা লুকমানে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো। ’ -সূরা লুকমান ১৫

কোরআনে কারিমের উক্ত আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হয়, যদি কোনো মুশরিক বাবা-মা তাদের মুসলিম কোনো সন্তানকে ইসলাম ধর্ম ছেড়ে দিয়ে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে শিরক করতে বলে, তাহলে তাদের এ আদেশটুকু মানা যাবে না। কিন্তু এমতাবস্থায়ও তাদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে। বাবা-মায়ের অধিকারসমূহ আদায় করতে হবে।

প্রতিবেশীর অধিকার সম্বলিত যে সব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেসবে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। সাহাবাদের জীবনী থেকেও এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর ঘটনা। একদিন তার ঘরে একটি বকরি জবাই করা হলো। খাবার রান্না হলে তিনি তার গোলামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীর নিকট কি এ খাবার হাদিয়া পাঠিয়েছো আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে কি এ খাবার দিয়েছো এরপর তিনি বললেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিবেশীর বিষয়ে জিবরাইল আমাকে এত উপদেশ দিচ্ছিল, আমি মনে করছিলাম- সে হয়তো তাদেরকে ওয়ারিশই বানিয়ে দেবে। ’ -সুনানে তিরমিজি ১৯৪৩

সুন্দর আচরণও অনেক সময় দাওয়াতের ভূমিকা পালন করে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এমন মহানুভব আচরণে মুগ্ধ হয়েও তো অনেকে ইসলাম কবুল করেছেন এবং পরবর্তীতেও সাহাবাদের যুগ থেকে শুরু করে যারা ইসলামের সুন্দর আচারগুলো নিজেদের মাঝে লালন করে গেছেন, তাদের আচরণ নীরবে অমুসলিমদের ইসলামের দিকে আহ্বান জানাতো। অমুসলিমরা এতে যথেষ্ট প্রভাবিত হতো। আশ্রয় নিতো ইসলামের শীতল ছায়ায়। আমাদের জীবনকে যদি আমরা এ ছাঁচে ঢেলে সাজাতে পারি, তাহলে অমুসলিমদের মন জয় করে ইসলাম ও মুসলমানের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হয়তো তেমন কঠিন হবে না।  


এই বিভাগের সব খবর
September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031